ভ্রাম্যমান প্রতিনিধি:
চট্টগ্রামের মীরসরাইয়ের করেরহাটে বিশেষ করে পাহাড়ী জনবহুল এলাকার আনাচে কানাচে আস্তানা গড়ে বসেছে মাদক ও চোরকারবারীদের অভ্যায়রণ্য। মীরসরাইয়ের করেরহাট বাজারটি সীমান্তবর্তী ভারতের হওয়ায় এখানে চোরকারবারী ও মাদক আমদানী রপ্তানীরা তাদের নিরাপদ আস্তানা হিসেবে বেছে নিয়ে।

বিশেষ করে গত ৫ই আগস্টের পর থেকে করেরহাট ইউনিয়নের আনাচে কানাচে সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে মাদকের আস্তানা যেন প্রকাশ্যে দুল খা”েছ। এক দিকে যেমন মাদক অন্যদিকে চোরকারবারীদের অভ্যায়রণ্য হিসেবে ভারতীয় মূল্যবান পণ্য সিগারেট, কাপড়ের রুল, উস্কী, ইয়াবা, পেনসিডিল, গাজা, মদ, হিরোইন, আফিনসহ ভারতীয় মসুল ডাল, চিনি, ও ভারতীয় মোটর সাইকেল কেনাবেচনার নিরাপদ ¯’ান হিসেবে চিহ্নিত রয়েছে।

বিশেষ করে, মীরসরাইয়ের করেরহাটের আমালীঘাট, কালোঘোনা, বদ্দ, গুবানী এসব এলাকায় ভারতীয় মূল্যবান কাপড়ের রোল, ভারতীয় মূল্যবান সিগারেট, ভারতীয় গরু, উস্কি, ভ্যারান্টি, মদ, গাজা, ইয়াবা, আফিন, পেনসিডিল, হিরোইন, মূল্যবান আইচসহ বিভিন্ন মাদক ও চোরাইপণ্য নিয়মিত হাট, অন্যদিকে, মীরসরাইয়ের উপজেলার করেরহাট ইউনিয়নের অলিনগর, পশ্চিম জোয়ার, হাবিলদারবাশা, শুভপুর বাসস্ট্যান্ড, শুভপুর বাজার, কয়লা, লিচু তলা, তেলীগ্রাম, দক্ষিণ অলিনগর, শাবনিখিলসহ করেরহাট ইউনিয়নের সর্বত্র ব্যাপী বিশেষ করে পাহাড়ী এলাকায় মাদক ও চোরকারবারীদের নিরাপদ আস্তানা হিসেবে গড়ে উঠেছে।
এদিকে, এ সমস্ত চোরকারবারী ও মাদক ইয়াবা বেচাকেনা কারবারীদের সর্বত্র সহযোগিতা করে যাচ্ছে স্থানীয় প্রশাসনের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা, যার মধ্যে বিডিআর সীমান্তরক্ষী, বনবিভাগ ও থানা প্রশাসনের দুর্নীবাজ লোকজনও জড়িত রয়েছে স্থানীয় ও অভিজ্ঞ মহলের ধারণা। এদিকে, এসব এলাকা জুড়ে ভারতীয় গরু পাচার থেকে শুরু করে ইয়াবা মাদক ও চোরাই পন্য পাচারের নিরাপদ ট্রানজিট হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। অভিজ্ঞ মহল ও স্থানীয়বাসী জানান, মীরসরাই উপজেলার করেরহাটের উপরোক্ত নির্বাচিত মাদক ও ইয়াবা পাচার এবং চোরাইপণ্য পাচারের ¯’ানগুলি চিহ্নিত করে দ্রুত মাদক ও চোরকারবারীদের দ্রুত গ্রেফতার পূর্বক অনতিবিলম্বে আইনের আওতায় আনার জোর দাবী জানান।
মাদক পাচার ও চোরাকারবারিদের স্বর্গরাজ্য এখন করেরহাট হাত বাড়ালেই মিলছে ইয়াবা,উইসকি, ফেনসিডিল , সিগারেট মাদক পাচারের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে বন্দরনগরী চট্টগ্রামের, ভারত সীমান্ত দ্বার একমাত্র চট্টগ্রাম জেলার মীরসরাই উপজেলার ১নং করেরহাট ইউনিয়ন জুড়ে হাত বাড়ালে অতি সহজেই মিলছে ফেনসিডিল, উইসকি, আইস, ইয়াবা ট্যাবলেট। এই মাদকের অনেকটা স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে মীরসরাই উপজেলার ১নংকরেরহাট সহ দু’টি পৌরসভার এমন কোনো গ্রাম নেই যেখানে ইয়াবা বিক্রি হ”েছ না। গত ৫ আগস্টের পর এর ভয়াবহতা ভয়ঙ্কর আকার ধারণ করেছে। এই নেশায় বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের পাশাপাশি স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা আসক্ত হয়ে পড়েছে। সম্প্রতি দেশে মাদকবিরোধী অভিযানে মীরসরাই ও জোরারগঞ্জ থানায় ইয়াবা কারবারে জড়িত ও সেবনকারীরা গ্রেফতার হলেও গডফাদাররা ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে।
প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে সীমান্ত পাহাড়ি জঙ্গল পার হয়ে রামগর করেরহাট সড়ক দিয়ে দেশের বিভিন্ন ¯’ানে পাচার হ”েছ ইয়াবা। প্রতিদিন এই সড়ক দিয়ে পাচারের সময় মীরসরাই-সীতাকুন্ড উপজেলার কোথাও না কোথাও ইয়াবা ধরা পড়ছে। মীরসরাই উপজেলার করেরহাট, আবুতোরাব, বারইয়ারহাট, মিঠাছড়া বাজারে গড়ে উঠেছে এর স্থানীয়বাজার। বখাটে যুবকদের পর এখন ইয়াবা জ্বরে আসক্ত হয়ে পড়ছে সমাজের নামীদামি সম্ভ্রান্ত পরিবারের স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরাও। সহজে হাতের কাছে পাওয়ায় উঠতি তরুণ-তরুণীদের কাছে বেশি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে যৌন উত্তেজক ইয়াবা ট্যাবলেট। অনেক ইউপি সদস্যও ইয়াবা বিক্রি ও সেবনের সাথে জড়িত রয়েছেন।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত ৫ আগস্টের পর উপজেলার করেরহাট-বাজারে ইয়াবার আধিপত্য বাড়তে থাকে। প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ইয়াবা সীমান্ত পার হয়ে সরাসরি গাড়িতে করে আসে মীরসরাই উপজেলার ১নং করেরহাট

এখানে পাইকারি বিক্রেতার কাছ থেকে খুচরা ক্রেতারা কিনে নিয়ে তুলে দেয় মাদকসেবীদের হাতে। আগে প্রতি পিস ইয়াবা ট্যবলেট বিক্রি হতো ৩০০/-২৫০ টাকায়, যা সাধারণ মাদকাসক্তদের হাতের নাগালের বাইরে ছিল। পরে এর দাম ১৫০-২০০ টাকায় নেমে আসায় স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরাও বেশি হারে ইয়াবায় আসক্ত হয়ে পড়ে।
কিশোর-কিশোরী ও শিক্ষার্থীদের ইয়াবায় আসক্তির কারণ হিসেবে জানা যায়, সহপাঠী ও বন্ধুবান্ধবের কানকথায় প্রথমে ত্বকের সৌন্দর্য ও গ্লামার বাড়ানোর কৌতুহল মেটাতে প্রথম দিকে তরুণ প্রজন্ম ইয়াবা সেবন করলেও এক সময় তা নেশার রূপ নেয়। একইসাথে বাড়ে যৌনতার প্রতি আসক্তিও। মাদকের খরচ জোগাতে টাকার জন্য মাদকসেবীরা পা বাড়া”েছ অপরাধ জগতে।
অনুসন্ধানে গেছে, ইয়াবাসেবীদের দৈনিক চাহিদার জোগান দিতে উপজেলার করেরহাট, কয়লা, হাবিলদার বাসা, আলিনগর, দক্ষিণ আলী নগর, বদ্ধ, আম্লীগ ঘাট, গোভনিয়া, বালুয়ার দিঘী, শুভপুর বাস স্ট্যান্ড, হাবিলদার বাসা, পশ্চিম জোয়ার, খিল মুরারি, কালাপানিয়া, ৯ টিলা মাজার সংলগ্ন এসমস্ত এলাকায় মাদক ও চোরা কারবারীরা দীর্ঘদিন যাবত ঘাঁটি পেতে রমরমা ভাবি, ভারতীয় চোরাকার বাড়ির সাথে জড়িত থেকে ভারত থেকে, মূল্যবান ফেনসিডিল, ভারতীয় শাড়ি, ভারতীয় চিনি, ভারতীয় সিগারেট, ইয়াবা বুঝকি, বেরান ডি ফেনসিডিল রমরমা ভাবি বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে।
একটি সূত্রে জানাই এ সমস্ত সূরা কারবারীদের সাথে স্থানীয় প্রশাসন থেকে শুরু করি সীমান্তবর্তী এলাকায় বিড়িয়ারের সাথে সুসম্পর্ক রেখে অপরাধ অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। যার কারণে মাদক চুরাকারবারি ও ভারতীয় শাড়ি, সিগারেট, কাপড়, মূল্যবান মাদকদ্রব্য প্রকাশ্যে পাঁচারও বিক্রয় করলে প্রশাসন দেখেও না দেখার ভান করে কাটিয়ে যায়।
বিভিন্ন বাজার ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে বেশ কয়েকটি ইয়াবা বিক্রেতা সিন্ডিকেট রয়েছে। ইয়াবা সিন্ডিকেটের ব্যবসায়ীরা থানা-প্রশাসনের কিছু অসাধু কর্মকর্তার সহযোগিতা নিয়ে মাদকাসক্তদের পাশাপাশি কিশোর-কিশোরী ও শিক্ষার্থীদের হাতে তুলে দি”েছ ভয়ঙ্কর ইয়াবা ট্যাবলেট। আপর দিকে পরিবহনজনিত নিরাপত্তা রক্ষার্থে ইয়াবা পরিবহন ও বিক্রয়ের সুবিধার্থে ছাত্রছাত্রীদের যুক্ত করছে ইয়াবা ব্যবসায়ীরা। উপজেলার করেরহাট ইউনিয়ন থেকে বিভিন্ন গ্রামে ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্য বিক্রি হয় দেদারসে। এর সাথে অনেক জনপ্রতিনিধিও জড়িত রয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনি”ছুক উপজেলা দায়িত্বশীল এক নেতা বলেন, ১নং করের হাট ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় আশঙ্কাজনকভাবে মাদক বিক্রি ও সেবন বেড়ে গেছে। বারইয়ারহাট পৌরসভার মাছবাজার, বাঁশবাজার ও জামালপুর কালিবাড়ি মন্দিরের আশপাশে দেদার মাদকব্যবসা চলছে।
অভিযোগ রয়েছে, পুলিশকে মাসোয়ারা দিয়ে মাদকব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে কারবারিরা। অথবা গ্রেফতার হওয়ার পর দুর্বল মামলার কারণে জামিনে বেরিয়ে পুনরায় কারবারে জড়িয়ে পড়ছে অনেকে। তবে পুলিশ তাদের সম্পৃক্ততার অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
মীরসরাই থানার ওসি ও জোরারগঞ্জ থানার ওসি আজকালের দর্পণকে বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে কোনো ছাড় নেই। আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। মাদক কারবারের সাথে জড়িতরা যে দলেরই হোক না কেন আমরা কোনো ধনের ছাড় দেবো না।