দর্পণ ডেস্ক:
চট্টগ্রাম সদর সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে দুর্নীতি নতুন কিছু নয়। এই অফিসটি ঘুষ এবং অনিয়মের জন্য পরিচিত। ভুক্তভোগীরা বলছেন, সরকার ডিজিটাল করার মাধ্যমে দুর্নীতিমুক্ত করার ঘোষণা দিলেও, এই অফিসের কর্মীরা ঘুষ লেনদেন করে যাচ্ছে প্রকাশ্যে, বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম সদর সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে বিভিন্ন ধরণের দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে।
এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো:ঘুষ লেনদেন:দলিল নিবন্ধন, নকল উত্তোলন, এবং অন্যান্য কাজে ঘুষ ছাড়া কোনো কাজ হয় না বলে অভিযোগ রয়েছে।জাল দলিল তৈরি: সদর সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের রেকর্ড কিপারদের বিরুদ্ধে জাল দলিল তৈরির অভিযোগও রয়েছে।
হয়রানি:সেবাগ্রহীতাদের বিভিন্নভাবে হয়রানি করা হয়, বিশেষ করে দলিল নিবন্ধন, তল্লাশি এবং নকল উত্তোলনের সময়।বদলি বাণিজ্য:জেলা রেজিস্ট্রার অফিসের কিছু অসাধু কর্মকর্তা বদলি এবং নিয়োগের নামে ঘুষ বাণিজ্য করে থাকেন, অডিটের নামে অর্থ আদায়:বছরে দুবার অডিটের নামে টাকা আদায় করা হয় কাজীদের কাছ থেকে।
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ইতোমধ্যে বেশ কয়েকবার এই অফিসে অভিযান চালিয়েছে এবং বেশ কিছু কর্মচারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে, এদিকে, নকল-নবিশ নিয়োগে অনিয়ম, জেলা রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে দুদকের হানা। চট্টগ্রাম জেলা রেজিস্ট্রার কার্যালয়ে নকল-নবিশ নিয়োগে অনিয়ম, বিভিন্ন কাজে ঘুষ দাবি ও আর্থিক অনিয়মের অভিযোগে অভিযান চালিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। অভিযান শেষে দুদক কর্মকর্তারা অভিযোগের ‘প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছেন’ বলে জানিয়েছেন।
বুধবার (১৬ এপ্রিল) দুদক জেলা কার্যালয় চট্টগ্রাম-১ এর সহকারী পরিচালক সাইয়েদ আলমের নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি দল এ অভিযান পরিচালনা করে। অভিযান শেষে সাইয়েদ আলম সাংবাদিকদের বলেন, ‘এখানে জেলা রেজিস্ট্রার আগে যিনি ছিলেন মিশন চাকমা ওনার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল এবং জেলা রেজিস্ট্রার বরাবর অভিযোগ ছিল ওখানে অফিস সহকারী এবং প্রধান সহকারী তারা হোতা ছিল এখানে টাকা-পয়সা তারা কালেকশন করে। এছাড়া চাকরির পদোন্নতি নিয়ে অভিযোগ ছিল।
সন্দ্বীপে কিছু নকল-নবিশের নিয়োগ নিয়ে অনিয়ম ছিল। সবগুলো আমরা রেকর্ডপত্র চেয়েছি এবং পেয়েছি।’ নকল-নবিশ নিয়োগে অনিয়মের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এখানে অনেক আগে থেকেই নকল-নবিশ নিয়োগ বন্ধ ছিল। তারপরও আইজিআরের পারমিশন ছাড়া এখানে নকল-নবিশের নিয়োগ দেওয়া হয়। পরবর্তীতে আইজিআর একটি শোকজ করা হয় এবং সাময়িকভাবে নিয়োগটি বাতিলও করা হয়। আমরা জিনিসটা দেখবো এখানে কোনো ধরনের অনিয়ম হয়েছে কিনা।
আর্থিক অনিয়ম ঘটেছে অবশ্যই। এখানকার কিছু কর্মচারীর বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল। তাদের আমরা ব্যক্তিগত নথি তলব করেছি। তাদের নামে কোনো ধরনের সম্পদ আছে কি-না, সেটাও দুদক খতিয়ে দেখবে। আমরা বিস্তারিত প্রতিবেদন কমিশন বরাবর জমা দেব। আর আরও কিছু রেকর্ডপত্র আমরা সংগ্রহ করবো।’
‘স্বন্দ্বীপে ১৯ জন নকল-নবিশ নিয়োগ দেওয়া হয়। সেটা নিয়ম অনুযায়ী হয়নি যতটুকু আমরা চিঠিতে দেখেছি। বাকি অভিযোগগুলোর বিষয়ে রেকর্ডপত্র পর্যালোচনা করে কমিশন বরাবর প্রতিবেদন দেব।’ বলেন তিনি। নামজারির জন্য ঘুষ দাবি করা হয় বিভিন্ন সময়ে—এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, ‘এ ধরনের অভিযোগ আছে, আমরাও শুনেছি। আমরা যখন সরেজমিনে আসি তখন সবাই অ্যালার্ট হয়ে যায়।
আমরা সেটা নিয়েও কাজ করছি। মানুষের ভেতরে সচেওতনতা তোইরির চেষ্টা করছি। যেন ঘুষ চাইলেই না দেয়। আমরা ক্যাশ ড্রয়ার তল্লাশি করেছি। সেরকম টাকা-পয়সা পাওয়া যায়নি। কিছু ডকুমেন্টস পাওয়া গেছে। সেগুলো আমরা পর্যালোচনা করবো।’ জেলা রেজিস্ট্রি অফিসে দালালদের আধিপত্য প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমরা আজকে এসে এ পর্যন্ত দালালদের দেখিনি। আমরা নিজেরাই দেখলাম সবকিছু।
তারপরও দালাল পাওয়া গেলে নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেব।’ উল্লেখ্য, দলিল রেজিস্ট্রেশন, তল্লাশি ও নকল উত্তোলনসহ বিভিন্ন সেবায় সেবা গ্রহীতাদের হয়রানি ও ঘুষ দাবিসহ বিভিন্ন অভিযোগে দেশের ৩৫টি সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে অভিযান চালিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
উল্লেখ্য যে, চট্টগ্রাম সদর সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের ব্যাপক দুর্নীতি অনিয়ম ও ঘুষ বাণিজ্য নিয়ে আজকালের দর্পণ পত্রিকায় ২০২৪ ইং সালে ধারাবাহিক অনিয়মের সংবাদ প্রকাশের পর বেশ কয়েকজন দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা নকে খড় দিয়ে দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত হয়ে অন্যত্রে কর্মজীবন শুরু করলেও বর্তমানে ৫ই আগস্ট জুলাই অভ্যুাত্থানের পরও চট্টগ্রাম সদর সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে এখনো বন্ধ হয়নি দুর্নীতি, অয়িনম, ঘুষ বাণিজ্যসহ নকল নবিশ নিয়োগ।
দুর্নীতিবাজ কিছু কর্মকর্তা চট্টগ্রাম সদর সাব-রেজিস্ট্রার অফিস থেকে অন্যত্রে বদলী হলেও এখনো তারা ফ্যাসিস্ট সরকারের বেশ কিছু রাঘববোয়াল দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা আগের চেয়ারে বসে বহাল তবিয়তে ঘুষ বাণিজ্য দুর্নীতি ও অনিয়মসহ জাল দলিল তৈরীর মতো গুরত্বর অপরাধমুলক কর্মকান্ডে জড়িত রয়েছে।
এ বিষয়ে অভিজ্ঞ মহলের ধারণা, বিগত আওয়ামী সরকারের একনিষ্ট্য কর্মী হয়েও বর্তমানে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুছ অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারের অধীনে বহাল তবিয়তে তাদের ঘুষ বাণিজ্যসহ নানান অপরাধমূলক কর্মকান্ড পরিচালনা করে যাচ্ছেন। সম্প্রতি চট্টগ্রাম সদর সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে দুদকের হানা দিলেও বহাল তবিয়তে পুরনো কাঁদায় চলছে তাদের ঘুষ বাণিজ্য, অনিয়ম ও দুর্নীতি।
এ বিষয়ে সাত্তার উদ্দীন বাবুল বলেন, বিগত আওয়ামী সরকারের অধীনে সকল কর্মকান্ডে জড়িত থাকা ও অর্থযোগানদাতা চট্টগ্রাম সদর সাব-রেজিস্ট্রার অফিসের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা এখনো পর্যন্ত অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারের অধীনে বহাল তবিয়তে স্বপদে থেকে চট্টগ্রাম সদর সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে প্রতিনিয়ত ঘুষ বাণিজ্য, অনিয়ম ও দুর্নীতি চালিয়ে যাচ্ছে।
এসব অপরাধীরা এসব অপকর্ম করে এখানো কি করে অর্ন্তবর্তীকালীন সরকারের অধীনে সরকারী চাকুরী থাকে তা নিয়ে জনমনে ব্যাপক প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করে সিএমপি পুলিশ কমিশনার ও চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন চট্টগ্রাম নগরবাসী।