• সোমবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৫, ০৮:৪৫ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
বাড়ছে রোগীর চাপ, নেই বিশেষজ্ঞ ডাক্তার সেন্টমার্টিন উন্মুক্ত আজ থেকে সাড়া নেই পর্যটকদের নীতিনির্ধারণে নমনীয়তা ও নাগরিক দায়িত্বের ওপর প্রধান উপদেষ্টার গুরুত্বারোপ সীতাকুণ্ডে আলোচিত ভাবির হোটেলে অভিযান, ১০ হাজার টাকা জরিমানা চট্টগ্রামের নতুন জেলা প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব নিলেন সাইফুল ইসলাম মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর টার্মিনালের প্রাক্-প্রস্তুতির পূর্তকাজ আরম্ভ চট্টগ্রামের রাউজানে প্রতিপক্ষের গুলিতে যুবদল কর্মী নিহত চট্টগ্রামে ব্যানার ছেঁড়া নিয়ে যুবদলের দু’পক্ষের সংঘর্ষে নিহত ১ আহত ১০ জন বিমানবন্দরে পুড়েছে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম মীরসরাই বাসীর ভাগ্য পরিবর্তনে বিএনপি থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী….. পারভেজ সাজ্জাদ

বাড়ছে রোগীর চাপ, নেই বিশেষজ্ঞ ডাক্তার

Reporter Name / ৩৩ Time View
Update Time : সোমবার, ১৭ নভেম্বর ২০২৫, ০৮:৪৫ অপরাহ্ন

আনোয়ারা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১০০ শয্যায় উন্নীতকরণের প্রস্তাব ঝুলে আছে কয়েক বছর

শনিবার , ১ নভেম্বর, ২০২৫ at ৭:২৮ পূর্বাহ্ণ

আনোয়ারা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে রোগী বেড়েছে। ৪ মাসে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন ৮০ হাজার রোগী। হাসপাতালের বেড, মেঝে, বারান্দা কোথাও রোগী ধারণের ঠাঁই নেই। হাসপাতালটি ১০০ শয্যায় উন্নীতকরণের প্রস্তাব থাকলেও অনুমোদনের অপেক্ষায় মন্ত্রণালয়ে ঝুলে আছে কয়েক বছর। জুলাই থেকে অক্টোবর পর্যন্ত গত ৪ মাসে ৮০ হাজারের বেশি রোগী জ্বর –সর্দি, পেট ব্যথা, ডায়রিয়াসহ নানান উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। অন্যদিকে হাসপাতালে জনবল সংকটসহ পর্যাপ্ত সুযোগ সুবিধা না থাকায় গলাকাটা দামে প্রাইভেট ক্লিনিক বা হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে বাধ্য হচ্ছেন হাজার হাজার অসুস্থ রোগী। উপজেলার ৪ লাখেরও বেশি মানুষের চিকিৎসা সেবার এক মাত্র ভরসাস্থল এই হাসপাতালে নানামুখি সংকট উত্তরণে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি এলাকাবাসীর। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, একদিকে প্রতিদিন কয়েক হাজার রোগীর চাপ সামলাতে ডাক্তার–নার্সদের হিমসিম খেতে হচ্ছে। তেমনি পর্যাপ্ত ডাক্তার ও জনবল সংকটের কারণে প্রত্যাশিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সেবা প্রার্থীরা। ৫০ শয্যার এ হাসপাতালটি ১০০ শয্যায় দ্রুত উন্নীতকরণের পদক্ষেপ গ্রহণ করা না গেলে এই অঞ্চলের জনসংখ্যা বৃদ্ধির চাপ অনুযায়ী প্রত্যাশিত চিকিৎসা সেবা কখনো দেওয়া সম্ভব হবে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। বর্তমানে আনোয়ারা হাসপাতালটি ১০০ শয্যায় উন্নীতকরণের প্রস্তাবটি সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তরে ঝুলে থাকায় কবে ১০০ শয্যায় উন্নীত হবে তা নিয়েও দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। বর্তমানে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সংকট, জনবল সংকট ও নানান সমস্যায় জর্জরিত হয়ে এই হাসপাতালটি নিজেই যেন অনেকটা রোগী। উপজেলার ১১ ইউনিয়ন ছাড়াও পার্শ্ববর্তী কর্ণফুলী, বাঁশখালী, সাতকানিয়া ও চন্দনাইশের একাংশের মানুষের চিকিৎসায় ভরসা আনোয়ারা হাসপাতাল। অবস্থান ও ভৌগলিক সুবিধার কারণে এখানে বরাবরই রোগীর ভিড় থাকে বেশি।

হাসপাতালের পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, জুলাই মাসে বেডে চিকিৎসা নিয়েছেন ৯৩৬ জন, জরুরি বিভাগে ৪ হাজার ৩৭জন, আউটডোরে ১৪ হাজার ৪০৪ জন,

আগস্ট মাসে বেডে চিকিৎসা নিয়েছেন ৯৫৯ জন, জরুরি বিভাগে ৪ হাজার ৬৮জন, আউটডোরে ১৪ হাজার ৫৫৮জন, সেপ্টেম্বর মাসে বেডে চিকিৎসা নিয়েছেন ৮২৪ জন, জরুরি বিভাগে ৪ হাজার ৫৯ জন, আউটডোরে ১৪ হাজার ৫৯৯জন। গত তিন মাসে বেডে চিকিৎসা নিয়েছেন ২ হাজার ৭১৯, জরুরি বিভাগে চিকিৎসা নিয়েছেন ১২ হাজার ১৬৪জন, আউটডোরে চিকিৎসা নিয়েছেন ৪৩ হাজার ৪৬১জন রোগী। আর অক্টোবর মাসেও ২০ হাজারের বেশি রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন বলে জানা গেছে। প্রতি মাসে গড়ে ২০ হাজার রোগীর চাপ রয়েছে। আগত রোগীর মধ্যে অধিকাংশ জ্বর, সর্দি, ডায়রিয়া আর চর্ম রোগে আক্রান্ত।

বর্তমানে হাসপাতালের ৮ জন মেডিকেল অফিসারের পদের মধ্যে ৫ জন্য অফিসার কর্মরত আছেন। বাকি তিনজনের মধ্যে দুইজন চাকরি থেকে ইস্তফা দিয়েছেন। কিন্তু এখনো পদ দুটি শূন্য হয়নি যার কারণে তাদের বিপরীতে কোনো ডাক্তার যোগদানেরও সুযোগ নেই। আর একজন ডাক্তার প্রেষণে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে কর্মরত আছেন। বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ জুনিয়র কনসালটেন্ট অর্থপেডিক সার্জারি ও জুনিয়র কনসালটেন্ট চর্ম ও যৌন পদ শূন্য অনেকদিন ধরে। আর জুনিয়র কনসালটেন্ট কার্ডিওলজি চমেক হাসপাতালে সংযুক্তিতে রয়েছেন। ইতিমধ্যে ৩ ডাক্তারের পদোন্নতি হয়েছে। তাদের অন্যত্র পোস্টিং হয়ে গেলে তাৎক্ষণিক শূন্যপদ পূরণ করা না হলে ডাক্তার সংকট আরো চরম আকার ধারণ করবে।

তৃতীয় শ্রেণীর ৮৪টি পদের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ প্রধান সহকারী কাম হিসাব রক্ষক, ক্যাশিয়ার, অফিস সহকারী তিন পদের মধ্যে ২টি পদ শূন্য, সহকারী নার্স পদে ১জন নেই, সহকারী ডেন্টাল সার্জন ১ জন, ইউনিয়ন সাব –সেন্টার সহকারী সার্জন ২জন, উপ–সহকারী মেডিকেল অফিসার ২ পদের মধ্যে ২টি শূন্য, মেডিকেল টেকনোলজি এক্সরে ১টি পদ শূন্য, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ল্যাব ৩ পদে ২ জন নেই, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ইপিআই ১টি পদ শূন্য, মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ফিজিও পদটি শূন্য, যক্ষা ও কুষ্ঠু নিয়ন্ত্রণ সহকারী পদে কেউ নেই, সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শকের ১টি পদ শূন্য, স্বাস্থ্য সহকারীর ৪৫টি পদের মধ্যে ৮টি শূন্য, ড্রাইভার পদ শূন্য, জুনিয়র মেকানিক পদসহ ৮৪টি পদের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ পদসহ ২৬ পদে কোনো সেবা দেওয়ার লোক নেই।

চতুর্থ শ্রেণীর ২৩ পদের মধ্যে কুক দুইটি, নিরাপত্তা প্রহরীর ২টি পদ শূন্য, আয়া দুইপদে আছে ১ জন,ওয়ার্ড বয় ৩ পদের মধ্যে ১ পদ শূন্য, পরিচ্ছন্নতাকর্মীর পাঁচ পদের মধ্যে দুটি পদ শূন্য, অফিস সহায়ক চারটি পদের মধ্যে ৪টি শূন্য, গার্ডেনার পদ শূন্য সহ ১২ পদে কোনো জনবল নেই। স্থানীয় রহিমা বেগম জানান, বর্তমানে আউটডোরে প্রতিদিন সকালে দীর্ঘ লাইনে অপেক্ষা করে টিকেট নিয়েও বিশেষজ্ঞ কোনো চিকিৎসকের কাছে চিকিৎসা নিতে পারি না। হাসপাতালে তেমন কোনো ওষুধও সাপ্লাই নেই। ঝিওরী গ্রামের তানজিনা আকতার জানান, তার ১৪ মাস বয়সী শিশু জান্নাতকে জ্বর সর্দি ও ডায়রিয়ার উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি করান। হাসপাতালের বেডে ভর্তি স্থানীয় আনোয়ারা সদর ইউনিয়নের বোয়ালগাঁও গ্রামের বাসিন্দা এ্যানী ভৌমিক বলেন, তার ৪ মাস বয়সী শিশু বিপুল ভৌমিক ৪ দিন ধরে জ্বর সর্দিতে আক্রান্ত হলে হাসপাতালে ভর্তি করান।

বায়পুর ইউনিয়নের ইউপি মহিলা সদস্যা শাহেদা পারভীন জানায়, তার মেয়ে নাইসা (১৬) অসুস্‌হ হলে ডাক্তারের পরামর্শে হাসপাতালে ভর্তি আছেন। কর্ণফুলী উপজেলার দৌলত গ্রামের মো.ওসমান জানায় গত বুধবার থেকে পেট ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। হাসপাতালে ভর্তি আবুল কাশেম (৬৩) জানায় শ্বাস কষ্ট নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। এখন একটু ভাল লাগতেছে।

আনোয়ারা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার মাহাতাব উদ্দিন চৌধুরী জানান, আমরা সাধ্যের মধ্যে সর্বোচ্চ চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছি। বর্তমানে রোগীর অনেক চাপ। আনোয়ারা উপজেলা ছাড়াও বিভিন্ন উপজেলা থেকে রোগী এসে ভিড় করে এ হাসপাতালে। কিন্তু বিশেষজ্ঞ ডাক্তার ও জনবল সংকটের কারণে পর্যাপ্ত সেবা দেওয়া অনেক ক্ষেত্রে সম্ভব হয় না। তিনি আরো জানান, হাসপাতালটি ১০০ শয্যায় উন্নীত করা হলে সেবার মান অনেক বেড়ে যাবে।


আপনার মতামত লিখুন :

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *